নিজের নাক কেটে মমতার যাত্রাভঙ্গ ওয়েইসির? বাংলায় বিজেপির 'ভোট ব্যাঙ্কে ডিপোজিট' শুরু!
বাংলার নির্বাচনে নিজের পদচিহ্ন রাখার কাজ শুরু করে দিলেন আসাদউদ্দিন ওয়েইসি। বিহারে ভালো ফলের পর বাংলায় মুসলিম ভোটের দৌলতে বিধানসভায় সদস্য পাঠাতে চাইছে ওয়েইসির দল। সেই লক্ষ্যে মুসলিম ভোট একত্রিত করার কাজে লেগে পড়লেন ওয়েইসি। সেই মতো এদিন হিন্দুত্ববাদের বিরুদ্ধে গলা চড়িয়ে টুইট করলেন আসাদউদ্দিন ওয়েইসি।

ওয়েইসির বিতর্কিত টুইট
এদিন এক টুইট বার্তায় ওয়েইসি লেখেন, 'হিন্দুত্ব আসলে একটি মিথ্যার উপর দাঁড়িয়ে যে, এই দেশে রাজনৈতিক ক্ষমতা শুধু একটি সমাজের মধ্যেই আবদ্ধ থাকবে, মুসলিমরা কোনও ভাবেই ক্ষমতা পাবেন না। তবে লোকসভা এবং বিধানসভায় আমাদের উপস্থিতি সেই মিথ্যাকে ভেঙে দেয়। আমরা যদি না থাকি তাহলে হিন্দুত্ব সংঘ উল্লাস করবে।' মূলত ওয়েসিকে বিজেপির বি টিম বলে ডাকা হচ্ছে রাজনৈতিক মহলে। এর জবাবেই এদিন এই বিতর্কিত টুইটটি করেন ওয়েইসি।

'হিন্দুত্ববাদ'-কে আক্রমণ
তবে অনেক বিশেষজ্ঞের মত, এভাবে 'হিন্দুত্ববাদ'-কে আক্রমণ শানিয়ে ওয়েইসি যেমন মুসলিম ভোট নিজের দিকে কেন্দ্রীভূত করতে চাইছেন, তেমনই ভাবে এর লাভ পাবে বিজেপিও। কারণ মুসলিম মৌলবাদের বিরুদ্ধে তখন গেরুয়া মনোভাব আরও দৃঢ় হয়ে উঠবে। এবং যে হিন্দু ভোট বাংলায় বিভক্ত, তা একত্রিত হয়ে বিজেপিকে মসনদে বসতে সাহায্য করবে।

ওয়েইসির ভোট গণিত ফর্মুলাতে লাভ বিজেপির
বাংলার ভোট দামামা বেজে গিয়েছে। সবাই ঘর গোছাতে শুরু করে দিয়েছে। তবে এরই মাঝে নয়া অতিথির মতো আগমন হয়েছে ওয়েইসির। এই পরিস্থিতিতে তৃণমূলের থেকে সিএএ, এনআরসি, এনপিআর ইস্যু ছিনিয়ে বাংলায় লড়াই করার ঘুঁটি সাজাচ্ছেন ওয়েইসি। আপাত দৃষ্টিতে এই পন্থা বিজেপি বিরোধী হলেও ভোট গণিতে এই ফর্মুলা বিজেপিকে সাহায্য করবে। আর তাই ওয়েইসির বিরুদ্ধে সরব হয়েছে তৃণমূল সহ বাম-কংগ্রেস জোট।

বিরোধী আন্দোলন নিয়ে ওয়েইসির তৎপরতা
গতবছর নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন পাশ হতেই উত্তাল হয়েছিল দেশের একাংশ। হিংশার আগুনে জ্বলেছে দেশের বহু অঞ্চল। এবং এর বেশিরভাগটাই লেগেছিল রাজনৈতিক ইন্ধনে। সেই একইরকম ভাবে এই রাজ্যেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে দীর্ঘ দিন ধরে চলেছে সিএএ বিরোধী আন্দোলন পথসভা।

'বিজেপি বিরোধিতা'র হাওয়া পালে টানতে ময়দানে ওয়েইসি
মূলত, গত বছরেরে লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির উত্থান ঠেকাতে এবং ২০২১-এ নিজের গদি বাঁচাতে রাষ্ট্রসংঘের অধীনে গণভোট পর্যন্ত চেয়ে বসেছিলেন মমতা। তবে মমতার 'বিজেপি বিরোধিতার' সেই হাওয়া নিজেদের পালে টানতে ময়দানে নেমেছিল সুদূর হায়দরাবাদের একটি দল।

পিএফআই-এর আড়ালে জমি শক্ত এমআইএম-এর
পশ্চিমবঙ্গে পিএফআই-এর আড়ালে নিজেদের জমি শক্ত করতে নেমেছিলেন হায়দরাবাদের সাংসদ আসাদউদ্দিন ওয়েইসির দল অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন। বহু পুরোনো রাজনৈতিক দল হলেও মূলত হায়দরাবাদ এবং তেলাঙ্গাার মুসলিম অধ্যুষিত এলাকাতেই সীমিত ছিল এই দলের গতিবিধি। তবে এবার হাদরাবাদের গণ্ডি পার করে বিহারে ভালো ফল করেছে এমআইএম। এবার ওয়েইসির পরবর্তী গন্তব্য বাংলা। এই মুহূর্তে বিহার সংলগ্ন উত্তর দিনাজপুর জেলা ছাড়াও, সংখ্যালঘু অধ্যুষিত মালদা এবং মুর্শিদাবাদ জেলাতেও এমআইএম-র সংগঠন যথেষ্ট মজবুত।

উত্তরবঙ্গে কংগ্রেসের কপালে চিন্তার ভাঁজ
এআইএমআইএম মালদা, মুর্শিদাবাদ এবং উত্তর দিনাজপুর জেলাতে প্রভাব ফেলবে কি না, তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে জল্পনা শুরু হয়েছে। এই জেলাগুলিতে এখনও কংগ্রেসের সুনিশ্চিত ভোট ব্যাঙ্ক আছে। রাজ্যে এআইএমআইএম-এর প্রভাব নিয়ে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরী বলেছেন, 'এটা অনস্বীকার্য যে বিহারে কিছু আসনে সংখ্যালঘু ভোট বিভাজন করে এআইএমআইএম, বিজেপি-র সুবিধা করে দিয়েছে। তাই আমাদের সবাইকে, বিশেষত ধর্মনিরপেক্ষ শক্তিগুলিকে সজাগ থাকতে হবে৷' পাশাপাশি অধীর চৌধুরীর অভিযোগ, এআইএমআইএম আসার আগেই তার দাম বাড়াচ্ছে বাংলার মিডিয়া। যা নিয়ে অধীরকে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যায়।

এআইএমআইএম-এর প্রভাব উর্দুভাষী সংখ্যালঘুদের উপর
এদিকে কংগ্রেসের একাংশের দাবি, পশ্চিমবঙ্গে মূলত এআইএমআইএম-এর প্রভাব উর্দুভাষী সংখ্যালঘুদের মধ্যে যা বাংলার সমস্ত সংখ্যালঘু জনসংখ্যার মাত্র ৬ শতাংশ। কংগ্রেসের বক্তব্য, 'আমার মনে হয় না যে বাংলাভাষী মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে এআইএমআইএম-এর প্রভাব খুব বেশি আছে। তাই শুধু উর্দুভাষী মুসলমান সমাজের উপর নির্ভর করে বেশিদূর এগোনো সম্ভব হবে না বলেই মনে হয়৷' যদি কংগ্রেসের এই দাবি সত্যি হয়, তবে ওয়েইসি সেভাবে বাংলায় দাগ কাটতে ব্যর্থ হবেন। তবে নিজে কিছু করতে না পারলেও অন্য দলের, বিশেষ করে তৃণমূলের যাত্রা ভঙ্গ যে হবে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই।
'পদ্ম' পুকুরে নেমে কাদা ঘাটবেন না ওয়েইসি, মমতার হাতিয়ার ছিনিয়ে 'ঘাসফুল' কাটার প্রস্তুতি