বঙ্গ রাজনীতিতে এআইএমআইএম 'কাঁটা', মমতার মাথা ব্যাথার কারণ এখন ওয়েইসি!
বিহারের সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনে ৫টি আসন দখল করার পরই হায়দরাবাদ ভিত্তিক অল ইন্ডিয়া মজলিশে ইত্তেহাদুল মুসলিমীন জানায় ২০২১ সালের পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা ভোটেও লড়বে তারা। আর আসাদউদ্দিন ওয়েইসির এই ঘোষণাতেই এখন তোলপাড় বঙ্গ রাজনীতি।

তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে জোট গড়তে চেয়ে চিঠি
ওয়েইসির দল বলছে, তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে জোট গড়তে চেয়ে চিঠি দেওয়া হলেও তাতে কোনও কোনও সাড়া মেলেনি। তাই একাই লড়বে তারা। এই পরিস্থিতিতে মুসলিম ভোট কেটে গিয়ে বিজেপির সুবিধা হবে বলে মনে করা হচ্ছে। এবং সেই ভাবে মুসলিম অধ্যুষিত চার জেলাকে টার্গেটও করেছে ওয়েসির দল।

বিজেপি বিরোধী ভোটে ভাগ বসাবে ওয়েইসির দল
বিহারে তৃতীয় ফ্রন্টে লড়াই করে বিজেপি বিরোধী জোটের ক্ষতি করার অভিযোগ উঠেছে ওয়েইসির বিরুদ্ধে। সীমাঞ্চলে বেশ কয়েকটি আসনে বিরোধীরা ওয়েইসির ভোট কাটার কারণেই হেরেছে বলে অভিযোগ উঠলেও তা ইতিমধ্যেই খারিজ করে দিয়েছেন ওয়েইসি স্বয়ং। তবে প্রশ্ন উঠছে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে ওয়েইসির প্রবেশ কি একই ভাবে বিজেপি বিরোধী ভোটে ভাগ বসাবে?

আব্বাস সিদ্দিকি নিজে আসাদউদ্দিনের প্রশংসা করেছেন
বাংলায় সেই অর্থে কোনও সংগঠন এখনও গড়ে তুলতে না পারলেও মূলত মুসলিম ইমামদের দৌলতে বাংলার মুসলিমদের মধ্যে ক্রমেই জনপ্রিয়তা লাভ করছে ওয়েইসির দল। উল্লেখ্য, ফুরফুরা শরীফের পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকি নিজে আসাদউদ্দিনের প্রশংসা করেছেন বহু জনসভায়। এদিকে সিদ্দিকি ভাঙড়ে একটি সভ থেকে জানিয়েছিলেন চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসে আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন দল ঘোষণা করা হবে। আগামী নির্বাচনেও তারা লড়বেন। সেই ক্ষেত্রে ওয়েইসির সঙ্গে তারা জোট গড় লড়লে মাথায় হাত পড়বে তৃণমূলের।

কোথায় কোথায় লড়তে পারে সিদ্দিকি ও ওয়েইসি
উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলি-সহ বিভিন্ন জেলার একাধিক আসনে তাঁরা প্রার্থী দেবেন বলে জানিয়েছিলেন সিদ্দিকি। অপরদিকে উত্তরবঙ্গের বিহার লাগোয়া উত্তর দিনাজপুর, দক্ষিণ দিনাজপুর, মালদহ এবং মুর্শিদাবাদকে পাখির চোখ করে এগোচ্ছে ওয়েইসির দল।

মুসলিম সমাজের অনুন্নয়নের কথা বলেন ওয়েইসি
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মত, মুসলিমদের বিরুদ্ধে হিন্দুত্ববাদী ভোট একজোট করে দেয় তার নির্বাচনী ভাষণ। তবে ধর্মীয় পরিচয়ের ভিত্তিতে রাজনীতি করলেও ওয়েইসি কড়া ভাষায় মুসলিম সমাজের অনুন্নয়নের কথা বলে থাকেন, তা অনেক ক্ষেত্রেই সত্যি।

৯৮টি আসনে মুসলিম ভোট ফ্যাক্টর
নির্বাচন বিশ্লেষকরা বলছেন, ২৯৪টির মধ্যে এমন ৯৮টি আসন আছে, যেখানে মুসলিম ভোটাররাই জয়-পরাজয় নির্ধারণ করেন। এগুলির মধ্যে ৩০টি আসন আছে যেখানে মুসলিম জনসংখ্যা প্রায় ৩০ শতাংশ আর ৩৮টি আসনে মুসলমান ভোটার প্রায় ২০ শতাংশ। মূলত বিহার লাগোয়া উত্তর দিনাজপুর, মালদহ বা মুর্শিদাবাদ অঞ্চলে এই আসনগুলির সংখ্যা বেশি।

এআইএমআইএম-এর একটা সমর্থন গড়ে উঠেছে
এদিকে কলকাতা এবং পার্শ্ববর্তী উত্তর ২৪ পরগনায় বেশ কিছু এলাকায় ঊর্দুভাষী মুসলিমরা থাকেন, তাদের মধ্যেও এআইএমআইএম-এর একটা সমর্থন গড়ে উঠেছে। তাই এইসব ফ্যাক্টরগুলো ভোটের ফলাফলে ভালোই প্রভাব ফেলতে পারে।

উভয় সংকটে পড়েছে তৃণমূল
তবে অনেকের আবার দাবি এরাজ্যের মুসলিমরা প্রথাগতভাবে ধর্মভিত্তিক রাজনীতিকে সমর্থন করেনি। তবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে বিজেপি ধারাবাহিক ভাবে মুসলিম তোষণের অভিযোগ তোলে। আবার ওয়েইসির অভিযোগ, মমতা মুসলিমদের উন্নয়নের জন্যে কিছু করেননি। এই দুই অভিযোগে জেরবার তৃণমূল এখন উভয় সংকটে পড়েছে।

মেরুকরণের রাজনীতি অত সহজ নয়
এরম প্রশ্নও উঠেছে যে দুর্গাপুজোর সময়ে ক্লাবগুলোকে সরকার অনুদান দেয়। কিন্তু ইদের সময়ে তো মুসলিম প্রধান এলাকার ক্লাবগুলোকে টাকা দেওয়া হয়নি। তবে বঙ্গের মুসলিমদের নিয়ে মেরুকরণের রাজনীতি অত সহজ নয়। কারণ তারা একজোট হয়ে কোনও একটি দলকে ভোট দেয় বলে যে ধারণা রয়েছে, তা এই রাজ্যের ক্ষেত্রে ভুল।
বিহারের সূর্যোদয়ে বাংলায় ঘনীভূত শঙ্কার কালো মেঘ, বিজেপি বিরোধিতায় দ্বিধাবিভক্ত বাম দলগুলি