বিহার নির্বাচনে ৫ আসন জেতা আসাদউদ্দিন ওয়েইসি এখন বাংলার 'হট টপিক'
বিহারের পাঁচটি আসনে জয়লাভ করেছে আসাদউদ্দিন ওয়েইসির এআইএমআইএম। এবং এতেই ঝড় বয়েছে বাংলার রাজনীতিতে। কংগ্রেস নেতা তথা বহরমপুরের সাংসদ অধীর চৌধুরী ইতিমধ্যে ওয়েইসির ভোট কাটার ইস্যু তুলে ধরে তোপ দেগেছেন। নিজের নাক কেটে অন্যের যাত্রা ভঙ্গের এই পধ্যতিতে যে আখেরে লাভ হবে বিজেপির তা জেনে গিয়েছে সবাই।

বিহারে ২ শতাংশেরও কম ভোট পেয়েছে ওয়েইসির দল
বিহারে ২ শতাংশেরও কম ভোট পেয়ে যেই প্রভাব ওয়েইসির দল রাখতে সক্ষম হয়েছে, সেটাই ভাবাচ্ছে বামদলগুলি এবং তৃণমূল কংগ্রেসকে। বাংলার ২৭ শতাংশ মুসলিম ভোট এমনিতেই এলাকা ভিত্তিক ভাবে দুই ভাগে বিভক্ত হয়। এর মধ্যে আসাদউদ্দিনের দল এসে সেই ভোটে কোপ বসালে ভোট কাটাকাটিতে বিজেপির লাভ হবে পুরো মাত্রায়।

২০টি আসনে লড়ে ৫টি আসন দখল
বিহারে ২০টি আসনে লড়ে ৫টি আসন দখল করে ওয়েইসির মজলিস-ই ইত্তেহাদুল মুসলিমিন। এর মধ্যে ৪টিই পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত লাগোয়া সীমাঞ্চলে। এছাড়া বহু আসনে ওয়েইসিরা ভোট কেটে বিজেপির সুবিধা করে দিয়েছে। বিহারের সেই সব আসনও পশ্চিমবঙ্গের মালদহ, উত্তর দিনাজপুরের লাগোয়া। এরপরই ওয়েইসি জানিয়েছেন যে তিনি বাংলার বিধানসভার ভোটের ময়দানে নামবেন। আর এতেই মাথায় হাত পড়েছে তৃণমূলের।

সত্যি কি বিজেপির বি-টিম ওয়েইসির দল?
তেলঙ্গানার এই রাজনৈতিক দল নিজেদের রাজ্যে ১১৯টি বিধানসভার মধ্যে ৯টি আসনে লড়ে। সেই দল বিভিন্ন রাজ্যে সংখ্যালঘু ভোটে কোপ বসিয়ে মেরুকরণের রাজনীতিতে মাতায় তা লাভ কের দিচ্ছে বিজেপির। বিরোধীরা তাই ওয়েইসিকে বিজেপির বি-টিম বলেও আখ্যা দিয়েছে। যদিও সেই অভিযোগ খারিজ করে ওয়েইসির দাবি, তিনি শুধু জাতীয় স্তরে সংখ্যালঘুদের দুর্দশার কথা তুলে ধরতে ভোটে লড়ছেন।

ওয়েইসির প্রভাব উর্দুভাষী মুসলিমদের মধ্যে
অবশ্য, বিশেষজ্ঞদের মত, ওয়েইসির প্রভাব মূলত উর্দুভাষী মুসলিমদের মধ্যে। বাংলার মুসলিমদের মাত্র ৬ শতাংশ উর্দুভাষী। তবে চলতি বছরের গোড়ায় সিএএ নিয়ে বিক্ষোভে যে ভাবে মালদহ-মুর্শিদাবাদ জ্বলেছে, তার নেপথ্যে ওয়েইসির দলকেই দেখা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী নিজে উত্তরবঙ্গে গিয়ে ওয়েইসির দলের বিরুদ্ধে গলা চড়িয়েছিলেন।

বাংলায় ওয়েসি ফ্যাক্টর কতটা গুরুতর হতে পারে?
এদিকে ওয়েইসি বিহারের মতো বাংলায় অতটা প্রভাব নাও ফেলতে পারে। কারণ, ওয়েইসি বিহারে একা না লড়ে মায়াবতীর বিএসপি, উপেন্দ্র কুশওয়াহার আরএলএসপি-র সঙ্গে জোট গড়েছিলেন। অপরদিকে বাংলায় লড়লে তারা মূলত, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর, মালদহ, মুর্শিদাবাদের মুসলিমদের মধ্যে নিজেদের প্রভাব বিস্তার করে আসন জেতার চেষ্টা করবে। তবে সেই ক্ষেত্রে তাদের কোনও জোট সঙ্গী থাকবে না।

তৃণমূলের কপালে চিন্তার রেখা
তবে আসনের প্রেক্ষিতে লাভ না হলেও বিরোধী দলগুলির ভোটে যে থাবা বসতে চলেছে তা নিশ্চিত। পশ্চিমবঙ্গের লাগোয়া বিহারের আটটি বিধানসভা কেন্দ্র রয়েছে। কিষাণগঞ্জ, পূর্ণিয়া, কাটিহার জেলার এই আটটি আসন পশ্চিমবঙ্গের উত্তর দিনাজপুর বা মালদহের লাগোয়া। ওয়েইসির দল এখানেই চারটি আসনে জিতেছে। তাছাড়া উত্তর দিনাজপুরের লাগোয়া ঠাকুরগঞ্জের মতো একাধিক আসনে ভোট কেটে আরজেডি-কংগ্রেসের জয় রুখে দিয়েছে। সেই একই ভাবে যদি তৃণমূল আটকে যায় ওয়েইসির কাছে? এই আশঙ্কাই এখন বিহারে ৫ আসন পাওয়া ওয়েইসিকে বানিয়েছে বাংলার হট টপিক।
বিহারের সূর্যোদয়ে বাংলায় ঘনীভূত শঙ্কার কালো মেঘ, বিজেপি বিরোধিতায় দ্বিধাবিভক্ত বাম দলগুলি