বাইডেন এলেও স্বস্তি নেই চিনের, বেজিংয়ের উপর চাপ বাড়াতে তৈরি হচ্ছে মার্কিন 'রোডম্যাপ'
রাষ্ট্রপতি যেই হোন না কেন, আমেরিকা-ভারতের সুসম্পর্ক যে বজায় থাকবে, সেই দাবি করেছিলেন বহু বিশেষজ্ঞ। আর এখন যখন মার্কিন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে জো বাইডেনের জয় প্রায় নিশ্চিত, তখন অনেকেরই মনে আশঙ্কা যে বাইডেনের চিনের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ভারতের সঙ্গে আমেরিকার সম্পর্ককে ব্যাক সিটে ঠেলে দিতে পারেন। তবে সত্যি কথা হল, বর্তমান পরিস্থিতিতে নিজের স্বার্থেই ভারতকে পাশে রাখতে হবে আমেরিকাকে।

বেজিং-বাইডেন সম্পর্ক অনেক পুরোনো
ডোনাল্ড ট্রাম্পকে চিন চার বছরেও চিনে উঠতে পারেনি। তবে বেজিংয়ের কাছে জো বাইডেন একজন পরিচিত মানুষ। ওবামা প্রশাসনের ভআইস প্রেসিডেন্ট হিসাবে চিনের সঙ্গে ভালো বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছইলেন বাইডেন। তবে এ ঘটনা বেশ কয়েক বছর আগের। সেই সময়ের দোহাই দিয়ে কেউ এটা বলতে পারে না যে বাইডেন ফের চিনের সঙ্গে হাত মেলাবেন।

চিনের হুমকি প্রতিহত করতে কী করবেন বাইডেন
বরং ইন্দো-প্যাসিফিক এলাকায় চিনে বেড়ে চলা হুমকিকে প্রতিহত করতে ভারতের সঙ্গেই হাত মেলাবেন বাইডেন। অনেকেরই হয়তি মনে নেই যে বাইডেন কিন্তু নিজে দিল্লিতে এসে প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে দেখা করে মার্কিন-ভারত বন্ধুন্তের বীজ নতুন করে রোপণ করে দিয়ে গিয়েছিলেন ওবামা কালে। এবং সেই পুরোনো 'বন্ধুত্ব'-এর কথা মোদীও বিশ্বকে মনে করিয়ে দেন একটি টুইটের মাধ্যমে।

বাইডেনকে কোন চোখে দেখছে দিল্লি
বাইডেনের জন নিশ্চিত হতেই ভাবী মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে নিজের একটি পুরোনো ছবি টুইট করে প্রধানমন্ত্রী লিখেছিলেন, 'অসামান্য জয়ের জন্য আপনাকে অভিনন্দন। ভাইস প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন ভারত ও আমেরিকার মধ্যে সম্পর্ক শক্তিশালী ক্ষেত্রে আপনার অবদান অতুলনীয় এবং প্রশংসনীয়। এই সম্পর্ককে আরও উচ্চতায় নিয়ে যেতে একযোগে কাজ করার অপেক্ষায় রইলাম।'

বাইডেনকে নিয়ে মোদীর টুইট খুবই তাৎপর্যপূর্ণ
মোদীর এই টুইট যে খুবই ইঙ্গিতবহ, তা বলাই বাহুল্য। যেভাবে চিনকে প্রতিহত করতে ট্রাম্প প্রশাসন ভারতকে সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছিল, তাতে অনেক ভারতীয় ভেবেছিলেন যে ট্রাম্প বিজয়ী হলেই হয়ত ভারতের লাভ। তবে অনেক বিশেষজ্ঞের আবার মত, ট্রাম্পের নীতির কোনও ঠিক নেই। ভারতের পাশে দাঁড়ানোর এই কৌশলটা হয়ত শুধু মাত্র নির্বাচনী বৈতরণী পার করা একটি চেষ্টা ছিল।

বাইডেনের চিন বিরোধী সুরের আভাস
প্রসঙ্গত, মার্কিন মুলুকে নির্বাচনের কয়েকদিন আগেই ট্রাম্প প্রশাসনের সেক্রেটারি অফ স্টেট মাইক পম্পেও এবং সেক্রেটারি অফ ডিফেন্স ভারতে এসে ২+২ মন্ত্রী স্তরের বৈঠক করে গিয়েছিলেন। অনেকেরই মত, ভারতীয় বংশদ্ভূত ভোটারদের প্রভাবিত করতেই এই সফরের তারিখ নির্ণয় করা হয়েছিল। তবে বাইডেন যে চিন ইস্যুতে ভারতকে সমর্থন করবে না, এরকম কোনও ইঙঅগিত মেলেনি। বরং মিলেছে বাইডেনের বদলে যাওয়া চিন বিরোধী সুরের আভাস।

বাইডেনকে নিয়ে চিনা আশঙ্কা
চিন নিজেও বুঝতে পেরেছে যে হোয়াইট হাউজে ট্রাম্পের বদলে বাইডেন এলেও তাদের জন্যে খুব একটা স্বস্তিদায়ক হবে না ভবিষ্যতের পথ চলা। তাই চিনা কমিউনিস্ট পার্টি নিয়ন্ত্রিত গ্লোবাল টাইমসে বাইডেনের নির্বাচনী জয় প্রসঙ্গে লেখা হয়, 'চিনের এরকম ভুল ধারণা রাখা উচিত নয় যে মার্কিন মুলুকে বাইডেন নির্বাচিত হয়েছে বলেই চিন-মার্কিন সম্পর্ক সুদৃঢ় হয়ে যাবে বা তা উন্নতির পথে হাঁটবে।'

বাইডেন জমানায় কেমন হবে চিন-মার্কিন সম্পর্ক
এরপর একপ্রকার হুমকির সুরেই লেখা হয়, 'চিনকে এমন একটা দেশ হয়ে উঠতে হবে যেখানে আমেরিকা আমাদের উপর কোনও জোর জুলুম খাটাতে না পারে। আমেরিকা যেভাবে নিজেদের জাতীয় স্বার্থটা বুঝে নেয়, সেভাবেই চিনকে নিজেদের জাতীয় স্বার্থ বুঝে পরবর্তীতে পা ফেলতে হবে।'

জিনপিংকে 'যোচ্চের' বলে সম্বোধন
বাইডেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসাবে নির্বাচিত হলে চিনের সঙ্গে কেমন হবে আমেরিকার সম্পর্ক? এই প্রশ্ন ঘুরঘুর করছিল অনেকেরই মনে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্তমান পরিস্থিতিতে বাইডেন ওয়াশিংটনের হাওয়া বুঝে চিন বিরোধী দলে নাম লিখিয়েছেন। বাইডেন মার্কিন বিদেশ নীতি ঠিক করার দায়িত্বে থেকেছেন বহুকাল। সেই সময় চিনের সঙ্গে সংলাপের মাধ্যমে দূরত্ব গুছিয়ে ফেলার উপরই জোর দিয়েছেন বারংবার। তবে সেই বাইডেনকেই গত কয়েক মাসে প্রকাশ্যে শি জিনপিংকে 'যোচ্চের' বলে সম্বোধন করতে শোনা গিয়েছে।

মোদীর ভঙ্গিতেই 'বাই আমেরিকান' পরিকল্পনা
চিনের উপর নির্ভরতা কমাতে কতকটা মোদীর ভঙ্গিতেই 'বাই আমেরিকান' পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন বাইডেন। ৪০০ বিলিয়ন খরচের এই প্রকল্পের অধীনে মার্কিন মুলুকে তৈরি জিনিস কিনবে মার্কিন সরকার। এছাড়া বিশ্বজুড়ে চিন বিরোধী গণতন্ত্রগুলিকে একসঙ্গে নিয়ে চলার পরিকল্পনার কথাও জানান বাইডেন। সেক্ষেত্রে ভারত-মার্কিন বন্ধুত্বে চিড় ধরবে না বলেই আশা করা যায়।

হংকং-তিব্বত ইস্যউতে বাইডেনের মনোভাব
এছাড়া হংকংয়ে মানবাধিকার, তিব্বতের গণতন্ত্র অ্যাক্ট পুরোপুরি লাগু করা হবে বলে দাবি জানিয়েছেন জো বাইডেন। উল্লেখ্য, এর আগে দলাই লামার সঙ্গে দেখা করে তিব্বতের গণতন্ত্র অ্যাক্টে সই করেছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে সেই আইন লাগু করার কোনও ইঙ্গিত মেলেনি ট্রাম্পের তরফে। এদিকে জিনজিয়াং প্রদেশে উইঘুর মুসলিমদের মানবাধিকার নিয়েও পদক্ষেপ নেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন বাইডেন।