বিহারে নীতীশের গদি বাঁচাতে ভোট ময়দানে নেমেছে 'নীরব' সেনা, আমূল বদলে যাবে নির্বাচনী সমীকরণ
বিহারে নির্বাচনী প্রচারের শেষ দিন। ৫ নভেম্বর বিহারের পূর্ণিয়া জেলায় জেডিইউ প্রার্থী লেসি সিংয়ের গলায় নীতীশ কুমার পরিয়ে দিচ্ছে 'বিজয় মালা'। প্রতিটি নির্বাচনী জনসভাতেই এভাবে 'জয়ের মালা' পরানোর কাজটা নীতীশের জন্যে এখ ধরণের প্রথা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে এই প্রথার সঙ্গে আরও একটি প্রথাও রয়েছে নীতীশের। তা হল সভার শেষে ভিড় করা মহিলাদের উদ্দেশে কড় জোড় করে প্রণাম জানানো।

শান্ত ভাবে নীতীশের পাশে থাকার বার্তা
৫ নভেম্বরের পূর্ণিয়া সভার শেষেও জনসভায় আগত মহিলাদের উদ্দেশে প্রণাম জানাতে ভোলেননি নীতীশ কুমার। এবং এর বদলে সেই মহিলাকা যেন নীতীশকে অভয় প্রদান করলেন। তাঁদের ভোটের আশীর্বাদ যে নীতীশের সঙ্গেই থাকবে, তা নিয়ে যেন আশ্বস্ত করলেন। কোনও স্লোগান নয়, খুব শান্ত ভাবে বুঝিয়ে দেওয়া, আমরা আপনার সঙ্গেই আছি।

বিহারের মহিলা ভোটারদের নীতীশের প্রতি নীরব সমর্থন
বিহার নির্বাচনী প্রচার কালে গোটা দেশ দেখেছে তেজস্বীর বেড়ে চলা জনপ্রিয়তা। আরজেডির জনসভায় তেজস্বীর ভাষণ শুনতে আশা উপচে পড়া ভিড়। চাকরি আশ্বাসে তেজস্বীর নামে স্লোগান তোলা যুব সমাজ। তবে অনেকেরই চোখের অগচোরে থেকে গিয়েছে বিহারের মহিলা ভোটারদের নীতীশের প্রতি নীরব সমর্থন।

নীতীশের ভোট বেস
তেজস্বীর ভোট বেস রয়েছে মুসলিম, যাদব, দলিতদের মাঝে। বিজেপির ভোট ব্যাঙ্ক রয়েছে হিন্দুত্ববাদী রাজনৈতিক চালে। তবে নীতীশের ১৫ বছরের শাসনকালে কী কোনও ভোট ব্যাঙ্ক তৈরি হয়নি? প্রধানমন্ত্রী মোদীকে দেখতে যেমন দূর থেকে জনসভায় ভিড় করে মানুষজন, তেমন ভাবে নীতীশের জন্য কী কেউ জনসভায় আসে না? নিশ্চয় আসে। তবে সেই জনপ্রিয়তা কী কমেছে সময়ের ব্যবধানে?

নীতীশের জয়ের ফর্মুলা
আসলে নীতীশ সহ জনতা দলের শীর্ষ নেতৃত্ব খুব ভালো করে জানেন, বিহারের গৃহস্থে থাকা মহিলারা জনসভায় এসে নীতীশের জন্যে গলা না ফাটালেও ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ঠিক নীতীশের জন্য ভোটটা দিয়ে আসেন। নীতীশের দীর্ঘ শাসনকালে এভাবেই জেডিইউকে সমর্থন জানিয়ে এসেছেন সেরাজ্যের মহিলা ভোটাররা। এরাই নীতীশের 'নীরব' সেনা।

মহিলা ভোটারদের সমীক্ষা
ইন্ডি টুডের লোকনীতি-সিএসডিএস সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে বিহারের মোট ৪১ শতাংশ মহিলা এনডিএ-কে ভোট দেন নীতীশের জন্য। অপর দিকে মাত্র ৩১ শতাংশ আরজেডি-কংগ্রেস জোটকে সমর্থন করছেন। তাছাড়া ২৮ শতাংশ মহিলা আছেন যারা অন্য দল বা জোটকে সমর্থন করেন। যদিও এই ভোটররা মাঠে ময়দানে নেমে নিজেদের সমর্থন প্রদর্শন করেন না। তাই অনেক রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞই এবার নীতীশ থেকে তেজস্বীকে এগিয়ে রেখেছিলেন।

নীতীশ-তেজস্বী টক্কর
নীতীশকে যে তেজস্বী কড়া টক্কর দেবেন তাতে কোনও সন্দেহ নেই। একেই প্রতিষ্ঠান বিরোধী হাওয়া। তার উপর বেকারত্ব এবং করোনা মহামারীর প্রহারে নীতীশের প্রশাসন যেন কাবু হয়ে পড়েছে। সেই সুযোগেই তেজস্বী নিজের জনপ্রিয়তা শিখরে নিয়ে গিয়েছেন। বাবা লালু প্রসাদের মতোই নিজের জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে মুসলিম-যাদব ফর্মুলাকে এক করতে সমর্থ হয়েছেন। তবে নীতীশের এই নীরব সমর্থক মহিলারা পুরো সমীকরণ পাল্টে দিতে পারেন নির্বাচনের।

নীতীশের নীতি
প্রথমবার ক্ষমতায় আসার পরই ২০০৬ সালে মহিলাদের জন্য পঞ্চায়তী ব্যবস্থায় সংরক্ষণ এনেছিলেন নীতীশ কুমার। সেই শুরু। এরপর বিভিন্ন প্রকল্প এবং নীতির মাধ্যমে বিহারের মহিলাদের মন জয় করেছেন নীতীশ। বাচ্চা মেয়েদের সাইকেল, ইউনিফর্ম, বই-খাতা দেওয়া হক, বা পড়াশোনায় অন্য ভাবে সাহায্য। নীতীশ থেমে থাকেননি। ২০১৫ সালেও নির্বাচন জয়ের পর নীতীশ কথামতো মদের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিলেন বিহারে। এর ফলে সেরাজ্যের মহিলারা অনেক উপকৃত। এবার সময় এসেছে সেই উপকারের বদলে নীতীশের গদি বাঁচানোর।
রাষ্ট্রসংঘের গুরুত্বপূর্ণ কমিটিতে নির্বাচিত পাকিস্তানের মুখোশ খুলে দেওয়া বিদিশা মৈত্র