কর্মসংস্থান নিয়ে মমতার মিথ্যা প্রতিশ্রুতি? শ্রমিক বিক্ষোভ খড়গপুরে
আগামী তিন বছরের মধ্যে নতুন করে ৩৫ লক্ষ কর্মসংস্থানের কথা ঘোষণা করেছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু এতটা উল্টো ঘটনা ঘটায় শ্রমিক বিক্ষোভ খড়গপুরে।

তিন বছরে ৩৫ লক্ষ কর্মসংস্থানের কথা ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্যের শিল্পোন্নয়ন নিগমের চেয়ারম্যান রাজীব সিংহ বলেছিলেন, রাজ্যের শিল্প তালুকগুলিতে ১৫ হাজার একর জায়গা পড়ে আছে। যেখানে আগামী ৬ মাসেই ৪-৫ লক্ষ কাজের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। কিন্তু বাস্তবের চিত্রটা উল্টে গেল।
জানা গিয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী ও চেয়ারম্যানের সেই ঘোষণার কয়েক ঘন্টা কাটতে না কাটতেই বন্ধ হয়ে গেল খড়গপুরের একটি কারখানা। আর যার ফলে বেকার হয়ে গেলেন প্রায় ৬০০ শ্রমিক। শিল্প তালুকের মধ্যেই বন্ধ কারখানা যা নিয়ে রীতিমত দুশ্চিন্তায় খড়গপুরের বাসিন্দারা। খড়গপুরের শিল্প তালুক 'বিদ্যাসাগর ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক' এদিন ডিউটি ধরতে এসে হতাশায় ভেঙে পড়তে দেখা গেল কয়েকশ শ্রমিককে, তাঁরা যে কারখানায় কাজ করতেন সেই রবিউন বিনিময় প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির ফটকে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে অনির্দিষ্টকালের জন্য লে-অফ নোটিশ। যার ফলে সকাল থেকেই শুরু হয়েছে শ্রমিক বিক্ষোভ।
শ্রমিকরা জানান, গত ৮ বছর ধরে বেতন বাড়েনি এক পয়সায়ও। মাত্র ৮০০০ টাকা মাস মাইনেতে কাজ করানো হত আমাদের। ওই টাকায় সংসার চলেনা। বছর খানেক আগে বেতন বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলন করেছিলাম তখন কারখানা বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেয় কারখানা কর্তৃপক্ষ। ভয়ে পিছিয়ে আসি আমরা কারন আমাদের পক্ষে কেউ দাঁড়ায়নি। এরপর বিষয়টি নিয়ে আমরা লেবার কমিশনারকে জানাই। কিছুদিন আগেই কোম্পানি লেবার কমিশনারের কাছে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল সরকারি হারে বেতন দেওয়ার। কিন্তু দিনের পর দিন টাল বাহানা চলতেই থাকে। বাধ্য হয়েই গত তিনদিন ধরে আমরা সেই প্রতিশ্রতি রাখার দাবিতেই আন্দোলন করছিলাম। আর তার মধ্যেই এই নোটিশ ঝুলিয়ে দেওয়া হল। এর পরিনতি যে এভাবে মেটানো হবে ভাবতেই পারিনি। চরম বিশ্বাস ঘাতকতা করা হল আমাদের সঙ্গে।
জানা গিয়েছে, শ্রমিকদের অভিযোগ ইন্টিরিয়র ডেকোরেশন সহ বিভিন্ন রকমের স্টিলের পাইপ তৈরি হত এই কারখানায়। বাজারে যার চাহিদা অসীম। কিন্তু ইচ্ছাকৃতভাবেই কর্তৃপক্ষ কারখানাটিকে চূড়ান্ত লোকসানের দিকে নিয়ে যাচ্ছিল যার পরিণতিতে 'লিকুইডেশনে চলে যায় কারখানাটি। এরপর আদালত লিকুইডেটর নিযুক্ত করে কিন্তু সঠিক সরকারি তত্ত্বাবধানের অভাবে লিকুইডেশন থেকে বেরিয়ে আসতে পারলনা এই কারখানা। বর্তমান কারখানাটিতে ৩০০জন স্থায়ী এবং ৩০০জন চুক্তি ভিত্তিক কর্মী কাজ করেন যাঁদের ভবিষ্যৎ পুরোপুরি অনিশ্চিত হয়ে পড়ল।
শ্রমিকদের অভিযোগ, তাঁদের পাশে কোনও শ্রমিক সংগঠন নেই। এমন কি গোটা শিল্প তালুক জুড়েই যাদের আধিপত্য সেই আইএনটিটিইউসির কোনও নেতা বা সংগঠক এই ঘটনার পরে কেউই তাঁদের পাশে নেই বলে জানিয়েছেন কর্মরত শ্রমিকরা।