৪ বছরের রাজনৈতিক জীবনে চিরসঙ্গী ছিল বিতর্ক, একনজরে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রেসিডেন্সি
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কি পেতে চলেছে তাদের ৪৬তম রাষ্ট্রপতি? নাকি ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসাবে তাঁর মেয়াদকাল আরও চারবছর বাড়াতে সক্ষম হবেন? মার্কিন নির্বাচন নিয়ে মানুষের মনে প্রশ্ন এবং কৌতূহল অনেক। তবে এরই মাঝে বিভিন্ন মার্কিন সংবাদমাধ্যমের সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে যে জনপ্রিয়তার নিরিখে ট্রাম্পকে অনেকটাই পিছনে ফেলেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এবং সেই সমীক্ষা যদি ব্যালট বক্সেও প্রতিফলিত হয়, সেই ক্ষেত্রে জর্জ এইচ বুশ সিনিয়রের পর ট্রাম্পই প্রথম প্রেসিডেন্ট হবেন যিনি মাত্র ১ দফার পরই হোয়াইট হাউজ চ্যুত হবেন। তবে এই যাত্রা কম ঘটনাবহুল ছিল না। বরং এই চার বছর এবং ট্রাম্পের অতীত জুড়ে রয়েছে একগুচ্ছ কেলেঙ্কারি।
কমলা হ্যারিস সহ রেকর্ড সংখ্যক মার্কিন-ভারতীয়দের ভাগ্য নির্ধারণ আজ, একনজরে তালিকা

সবথেকে বেশি বিতর্কিত প্রেসিডেন্ট
অনেক বিশেষজ্ঞের মতে, আমেরিকা তার দু'শো বছরেরও বেশি পুরানো গণতন্ত্রের ইতিহাসে সবথেকে বেশি বিতর্কিত প্রেসিডেন্টকে চাক্ষুষ করেছে ২০১৭ সালে। একদিকে কট্টরবাদী মনোভাব এবং অন্যদিকে উগ্র আমেরিকানপন্থী দৃষ্টিভঙ্গি তাঁর বিতর্কিত ভাবমূর্তিকে দিনে দিনে আরও স্পষ্ট করে তুলেছে বলেই মনে করছেন কূটনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ। অবশ্য তাঁর সমর্থকদের মাঝে এই কট্টরপন্থার জন্যেই জনপ্রিয় তিনি।

ট্রাম্পের হাত ধরে মার্কিনিদের একাংশ কট্টরপন্থী হয়েছে
অনেকেই মনে করেছিলেন, ট্রাম্পের অকপট, আগ্রাসী এবং ভিনদেশের নাগরিকদের প্রতি তথাকথিত 'বিরূপ' মনোভাব আখেরে বিপক্ষ শিবিরকেই সাহায্য করবে। কিন্তু শেষ চার বছরে ট্রাম্প তাঁর রাজনৈতিক সফরনামায় বার বার এই ধারণাকে ভুল প্রমাণ করেছেন। অনেক উদারপন্থীর মতে, ট্রাম্পের হাত ধরে মার্কিন নাগরিকদের একাংশ কট্টরপন্থায় আরও বেশি বিশ্বাস করতে শুরু করেছেন।

ট্রাম্পের জন্যই শুরু হয় চিনের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধ
পর্যবেক্ষকরা অনেকেই বলেন, চিনের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধ আদতে ট্রাম্পের জন্যই শুরু হয়েছে। আর এতে চিনের কমিউনিস্ট রাজের উপর অনেকটা বড় ধাক্কা নেমে এসেছে। উলটো দিক থেকে বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে আখেরে লাভ হয়েছে আমেরিকারই। আর এর ফলে ট্রাম্পের 'অ্যামেরিকা ফার্স্ট' নীতি আরও বেশি প্রকট হয়েছে। এমনই মনে করছেন কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা। কূটনীতিবিদরা বলছেন, প্রেসিডেন্ট হিসাবে ট্রাম্পের 'আমেরিকা ফার্স্ট' নীতি বেশ সফল।

ট্রাম্পের ইমপিচমেন্ট
এদিকে ডেমোক্র্যাট শিবিরের তরফে ট্রাম্পের ইমপিচ করার যে চেষ্টা করা হয়েছিল তা ব্যর্থ হয়েছিল। ইমপিচমেন্ট বিফল হওয়ার পর থেকে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হিসাবে ট্রাম্পের ভূমিকা আরও বলিষ্ঠ হয়ে ওঠে। ফেব্রুয়ারি মাসে স্টেট অফ দা ইউনিয়নে ট্রাম্পের দৃঢ় বক্তৃতা থেকেই তা স্পষ্ট হয়। তবে মাত্র চার বছরের রাজনৈতিক জীবনে প্রেসিডেন্ট হিসাবে নির্বাচিত হওয়ার শিখর থেকে চরম বিতর্কের মধ্যে নিজের নাম জড়িয়েছেন ট্রাম্প।

ট্রাম্পের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্ক
ট্রাম্পের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্ক নিয়ে যথেষ্ট কাঁটাছেড়া হয়েছিল ইমপিচমেন্টের প্রক্রিয়ার সময়। রাশিয়ার আগ্রাসন রুখতে ইউক্রেনকে সামরিক সাহায্য দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিনি। বদলে ইউক্রেনের থেকে রাজনৈতিক সাহায্য নিয়েছিলেন। তবে এই নিয়ে খুব বেশি বেগ পেতে হয়নি ট্রাম্পকে। হাউজে ডেমোক্র্যাটরা ট্রাম্পকে ইমপিচ করার পক্ষে মত দিয়েছিলেন। অন্যদিকে সেনেটে রিপাবলিকানরা মত দিয়েছিলেন বেকসুর খালাস করার পক্ষে।

২০১৬ সালের অভাবনীয় উত্থান
২০১৫ সালের দিকে ট্রাম্প যখন মার্কিন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে নিজের প্রার্থীপদ নিয়ে ভাবনা চিন্তা শুরু করেছিলেন, সেই সময় ট্রাম্পকে প্রেসিডেন্ট পদের জন্য মনোনীত করার বিষয়ে রিপাবলিকান দলের অনেকেই ভিন্নমত দিয়েছিলেন। তবে স্ত্রী মেলানিয়াকে সঙ্গে নিয়ে দলের মধ্যে তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত আওয়াজকে থামিয়ে দিতে পেরেছিলেন ট্রাম্প। মনোনয়নের দৌড়ে পিছনে ফেলে দিয়েছিলেন রিপাবলিক দলের অনেক বাঘা-বাঘা মুখকে।

'মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন'
সেই বার ক্লিভল্যান্ডে রিপাবলিকানদের জাতীয় সম্মেলনে দলের হয়ে মনোনয়ন গ্রহণ করার সময় ট্রাম্প বলেছিলেন, 'মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন।' বার্তা দিয়েছিলেন আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে আরও জোরদার করার। শুরু থেকেই নিজের 'অ্যামেরিকা ফার্স্ট' চিন্তাধারাকে স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন।

যেসব বিষয়ে নজর
আমেরিকার অর্থনীতি এবং অপরাধ দমন সংক্রান্ত বিষয়গুলির উপর জোর দিচ্ছিলেন ট্রাম্প। কূটনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, এই দুইয়ের উপর ভর করেই দ্বিতীয় বারের জন্য প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের বৈতরণী পার করার চেষ্টায় ছিলেন তিনি। কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ট্রাম্প ও তাঁর প্রতিদ্বন্দী ডেমোক্র্যাট দলের জো বিডেন, দুজনেরই নির্বাচনী প্রচারের উপর প্রভাব ফেলেছে করোনা ভাইরাস।

দেশে একের পর এক প্রতিবাদ
ট্রাম্প আমেরিকার প্রেসিডেন্ট পদে আসার পর থেকে, দেশে একের পর এক প্রতিবাদ। ২০১৭-র জানুয়ারি। ভ্রমণের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা এবং তারপর দক্ষিণে মেক্সিকোর সীমান্ত বরাবর পাঁচিল তুলে দেওয়ার পরিকল্পনায় প্রতিবাদের আগুন আরও ব্যাপক আকার নেয়।

ঘরোয়া রাজনীতিতে সাফল্য
তবে ঘরোয়া রাজনীতিতে বেশ কিছু সাফল্যও রয়েছে ট্রাম্পের। প্রেসিডেন্ট পদে আসার পর আমেরিকার সুপ্রিম কোর্টে নিল গরসুচ ও ব্রেট কাভানাগ, দুই রক্ষণশীল জাস্টিসকে নিয়োগের জন্য মনোনীত করেন তিনি। এরপর ২০২০ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ঠিক আগেই অ্যামি কনি বারেটকে সুপ্রিম কোর্টের জাস্টিস হিসাবে মনোনয়ন করেন।

আন্তর্জাতিক আঙিনাতে ট্রাম্পের সাফল্য
শুধুমাত্র ঘরোয়া রাজনীতিতেই নয়, আন্তর্জাতিক আঙিনাতেও অনেকগুলি বড় বড় সাফল্য রয়েছে ট্রাম্পের আমলে। বিশ্বজুড়ে কোরোনার সংক্রমণ শুরু হওয়ার প্রথম দিকের দিনগুলিতে ট্রাম্প চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বেশ 'বন্ধুত্বপূর্ণ' এবং একটি ইতিবাচক সম্পর্ক চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টায় ছিলেন। এখন অবশ্য চিনের সঙ্গে এই সম্পর্ক পুরো একশো আশি ডিগ্রি ঘুরে গিয়েছে।

ট্রাম্পের করোনার কাঁটা
এদিকে যখন করোনার দাপট সামলাতে ব্যস্ত ট্রাম্পের প্রশাসন, ঠিক সেই সময় নতুন করে বিক্ষোভ শুরু হয়ে মিনিয়াপোলিস পুলিশের এক আধিকারিকের হাতে জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যু নিয়ে। কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েডকে হাঁটু দিয়ে ঘাড়ে চাপ দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছিলেন ওই পুলিশ আধিকারিক। আমেরিকার একের পর এক শহরে হিংসাত্মক প্রতিবাদের আগুন ছড়িয়ে পড়েছিল। প্রায় কয়েক মাস ধরে পোর্টল্যান্ড, ওরেগনের রাজপথের দখল নিয়েছিলেন বিক্ষোভকারীরা। বর্ণবিদ্বেষের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ নিমেষে রূপ নিয়েছিল ভাঙচুর ও সংঘর্ষের।