কেবল মেলাতে আটকে না থেকে গঙ্গাসাগরকে চিনে নিন অন্য রূপে
'সব তীর্থ বারবার, গঙ্গাসাগর একবার' কথাটা যথার্থ হলেও কিছুক্ষেত্রে তা সত্যকেও গোপন করে থাকে। ঐতিহ্যমণ্ডিত তীর্থ এবং সুদূরপ্রসারী মেলা ছাড়াও যে এলাকার নিজস্ব কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে এবং তার মহিমাও কোনও অংশে কম নয়, তা হয়তো নজরেই পড়ে না! সাগরে মোড়া এই দ্বীপের সৌন্দর্য্য কতটা গভীর, তা তত্ত্বতালাশ করে দেখে নেওয়া যাক।

অবস্থিতি ও আয়তন
কলকাতা থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত এই দ্বীপের আয়তন প্রায় ৩০০ বর্গকিলোমিটার। সুন্দরবনের দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত এই দ্বীপটি বঙ্গোপসাগর, মুড়িগঙ্গা এবং হুগলি নদী দিয়ে বেষ্টিত।

ভাষা এবং সংস্কৃতি
গঙ্গাসাগরের সংস্কৃতি বঙ্গ (বাংলা) ও উৎকলের (ওড়িশা) সংমিশ্রণে তৈরি। খোদ মেদিনীপুরী ভাষার অন্তর্গত কাঁথি এলাকার বাংলায় কথা বলেন এই দ্বীপের মানুষ। এঁদের খাদ্যভাসেও বাংলা ও ওড়িশার মিশ্রণ পরিলক্ষিত হয়।

ইতিহাস কী বলছে
পুরাণে কথিত কপিল মুণির আশ্রম ও তার ইতিহাস সবারই জানা। তবে সেটাই যে সব নয়, তার পরিচয় পাওয়া যায় দ্বীপের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ইতিহাস ঘেঁটে। সাগরদ্বীপের মন্দিরতলা, ধবলাট, মনসাদ্বীপ, হরিণবাড়ি, সুমতিনগর, মহিষমারি এলাকার ভূগর্ভস্থ পাকা বাড়ি, দেবাঙ্গন, বিষ্ণু ও জৈনমূর্তি প্রাক-ইসলাম যুগের দিকে টেনে নিয়ে যায় বলে মনে করেন প্রত্নতাত্বিকরা। এই দ্বীপে রাজা প্রতাপাদিত্যের নৌবহরের ঘাঁটি ছিল বলে মনে করা হয়।

যাত্রাপথের আকর্ষণ
লোকমুখে প্রচারিত যে একদা গঙ্গাসাগরে পৌঁছনো ছিল অতি কঠিন কাজ। ঝুঁকি দিয়ে মোড়া ছিল বন্ধুর পথ। যোগাযোগ ব্যবস্থা আধুনিক হওয়ার পর ঝুঁকি কমলেও যাত্রাপথের কাঠিন্য রয়েছে এখনও। যদিও তা কম সুন্দর নয়। অফ সিজনে কাকদ্বীপের আট নম্বর লট থেকে ভেসেলে মুড়িগঙ্গা নদী পেরোনো কম রোমাঞ্চকর নয়।

গ্রাম্য উপস্থাপনা
ভেসেল যখন নোঙর বাঁধবে কচুবেড়িয়া ঘাটে, ঠিক সেই সময় থেকেক প্রকৃতিক কোলে হারিয়ে যেতে মন চাইবে। বাস কিংবা প্রাইভেট গাড়িতে গঙ্গাসাগরের দিকে রওনা হওয়ার আগে মুড়িগঙ্গা, পাখিরালা, রুদ্রনগর, ধবলাট, হরিণবাড়ি, মনসাদ্বীপ এবং সংলগ্ন গ্রাম, তার নীরবতা, শান্ত-সমাহিত পরিবেশ মানুষকে টানবেই।

এখনও অবশিষ্ট রয়েছেন লোধারা
সাগরদ্বীপের হৃদপীণ্ড রুদ্রনগর থেকে প্রায় পাঁচ থেকে সাত কিলোমিটার ভিতরে রাধাকৃষ্ণপুরের এক কোণে এখনও খোঁজ পাওয়া যায় সাবেক লোধা প্রজাতির মানুষের। ইংরেজ শাসনের সময় থেকে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা এই প্রজাতি এখন আগের থেকে অনেকটাই সভ্য। শিক্ষার আলোয় আলোকিত। তা বলে নিজ সংস্কৃতিও ধরে রাখতে তাঁরা ভুলে যাননি।

বিখ্যাত লাইট হাউস
সাগরদ্বীপের উত্তরে রয়েছে ঘোড়ামারা ও লোহাচূড়া দ্বীপ। তাদের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে থাকা লাইট হাউসটি ১৮০৮ সালে তৈরি করা হয়েছে বলে ইতিহাসে বর্ণিত। অফ-সিজনে যার সৌন্দর্য্য দেখার মতো হয়।
