পিএনবি-তে সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকার আর্থিক কেলেঙ্কারিতে নাম উঠে আসছে বিখ্যাত হিরে ব্যবসায়ী নীরব মোদীর। সারা পৃথিবী জুড়ে তাঁর হিরের গয়নার খ্যাতি রয়েছে। শুধু বলিউড নয়, হলিউড, এমনকী রাজা-মহারাজার পরিবারের লোকেরাও তাঁর গয়না পরেছেন। এহেন নীরব মোদী কি ভারতের নতুন বিজয় মালিয়া? পিএনবি কেলেঙ্কারির খবর সামনে আসার পর এই প্রশ্নটাই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে। আসুন জেনে নেওয়া যাক কীর্তিমান এই ব্যবসায়ী সম্পর্কে।

নীরব মোদী
বেলজিয়ামের অ্যান্টওয়ার্প শহরে বড় হয়ে উঠেছেন নীরব মোদী। ছোটবেলা থেকেই তার ঝোঁক ছিল ডিজাইনিংয়ে। কমবয়সেই সেই নেশার ঝোঁকে ইউরোপের তাবড় বড় মিউজিয়াম চষে ফেলেন তিনি। সেখান থেকেই শখ যায় হিরের উপরে।
[আরও পড়ুন: পিএনবি-র ছাড়পত্র দেখে ফাঁদে পা অন্য ব্যাঙ্কগুলির, মূল্য চোকাতে হল ১১ হাজার কোটি টাকায় ]

ভারতে আসা
এই হিরের টানেই ভারতে এসে প্রশিক্ষণ নেন নীরব। হিরে ব্যবসার সমস্ত খুঁটিনাটি জানেন। তারপরে ১৯৯৯ সালে তৈরি করেন ফায়ারস্টার নামে একটি হিরের সোর্সিং ও ট্রেডিং কোম্পানি।
[আরও পড়ুন:পিএনবি ব্যাঙ্ক কেলেঙ্কারির তদন্তে নামল সিবিআই, এক সপ্তাহের মধ্যে রিপোর্ট তলব কেন্দ্রের]

ব্যবসার অনুপ্রেরণা
২০০৮ সালে নীরবের এক বন্ধু তাকে একজোড়া হিরের দুল তৈরি করে দিতে বলেন। মাসখানেক ডিজাইন করার পরে ও সঠিক হিরে খুঁজে নীরব বুঝতে পারেন, এই ব্যবসায় তার টান ও ভবিষ্যৎ দুটোই রয়েছে। ব্যস, সেখান থেকেই সামনে আসে হিরের ব্র্যান্ড 'নীরব মোদী'।

দুর্নীতিতে নাম জড়ানো
২০১১ সালে মুম্বইয়ে পিএনবি-র ব্র্যাডি হাউস শাখা থেকে কোনও নিয়মকানুন ছাড়াই বিরাট অঙ্কের ঋণের গ্যারান্টি হাতিয়ে নেয় নীরব ও তাঁর সংস্থা ফায়ারস্টার ডায়মন্ড। লক্ষ্য ছিল হংকং থেকে হিরে কেনা। যার মানে, টাকা মেটানো না হলে তার দায়িত্ব ব্যাঙ্কের। এক্ষেত্রে লেটার অফ আন্ডারটেকিং করিয়ে নেওয়া হয়েছিল ব্যাঙ্কের ভিতরের লোক দিয়ে। সেই থেকে কেলেঙ্কারি শুরু।
[আরও পড়ুন: নীরবের আগে কারা আর্থিক কেলেঙ্কারি করে চুপিসাড়ে দেশ ছেড়েছেন, দেখুন পুরো তালিকা ]

বোকা বনে অন্য তিন ব্যাঙ্ক
সেই লেটার অব আন্ডারটেকিং দেখিয়ে পরে ইউনিয়ন ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া, এলাহাবাদ ব্যাঙ্ক ও অ্যাক্সিস ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নেওয়া যায়। সেগুলি নেওয়া হয় হংকয়ের শাখা ব্যাঙ্কগুলি থেকে। যে খাতে পিএনবি-কে ২৮০ কোটি টাকা ঋণ ইতিমধ্যে শোধ করতে হয়েছে।

তদন্তে পিএনবি
ঘটনা জানতে পেরে তদন্তে নামে পিএনবি। জানা যায়, ব্যাঙ্কের ভিতরের কর্মীদের ধরে এই জালিয়াতি করা হয়েছে। মোট জালিয়াতি হওয়া অর্থের পরিমাণ ১১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। এই ঘটনায় ইতিমধ্যে ১০ জনকে সাসপেন্ড করেছে ব্যাঙ্ক। বিষয়টি সিবিআইকে জানানো হয়েছে।

নতুন আবদার
গত মাসের ১৬ জানুয়ারি আরও তিনটি সংস্থা পিএনবি-র কাছে একইরকম ঋণ চেয়ে আবদার করে। সেই তিনটি সংস্থা নীরব ও তার পরিবার-আত্মীয়দের। পিএবি তখন বলে, আগে কোনও গ্যারান্টি ছাড়াই তাঁরা ঋণের ছাড়পত্র পেয়েছে। তারপরই জানা যায়, ওই ব্যাঙ্কের দুই অফিসার গোকুলনাথ শেট্টি ও মনোজ খারাট নিয়ম ভেঙে ঋণের গ্যারান্টি পাইয়ে দিয়েছেন। সেখান থেকেই শুরু রহস্যের।

হিরের ফ্যাশন ব্র্যান্ড
নীরব মোদী খুব তাড়াতাড়ি খ্যাতির চূড়ায় পৌঁছে গিয়েছেন। হলিউড তারকা কেন উইন্সলেট, ডাকোটা জনশন থেকে শুরু করে বলিউডের প্রিয়াঙ্কা চোপড়া, লিসা হেডেনের মতো অনেকেই তাঁর গয়না পরে প্রোমোশন করেছেন। কেন্স উইন্সলেট নীরব মোদীর হিরের গয়না পরে রেড কার্পেটেও হেঁটেছেন।