স্টাফ রিপোর্টার, দুর্গাপুর: ‘‘আমাদের বাড়িতে একজন আত্মহত্যা করেছেন৷ তাড়াতাড়ি আসুন৷’’ সাত সকালে এক মহিলার ফোন পেয়ে রীতিমতো হকচকিয়ে গিয়েছিলেন পশ্চিম বর্ধমানের দুর্গাপুর থানার অফিসাররা৷
যদিও তাঁরা তখনও জানতেন না যে বিস্ময়ের এখনও অনেক বাকি৷ দুর্গাপুরের এ জোনে ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্তকারীদের চক্ষুচড়কগাছ৷ মৃতদেহের হদিশ নেই৷ কোনও ঝুলন্ত দেহ নেই৷ কোনও দেহ পড়েও নেই৷ তাহলে!
আরও পড়ুন: বেতন বৃদ্ধির দাবিতে উত্তাল শিবপুর আইআইইএসটি
পুলিশের সামনে মুশকিল আসান হয়ে হাজির হলেন সেই মহিলা, যিনি ফোন করে আত্মহত্যার কথা দুর্গাপুর থানায় জানিয়েছিলেন৷ নাম মনীষা কুমারী৷ দুর্গাপুর এ জোনে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার৷ তিনিই দেখালেন, আবাসনের লিফটের সামনে পড়ে থাকা একটি স্যুটকেস৷ তার মধ্যেই রয়েছে মৃতদেহ৷
শুরুতেই সন্দেহ হয় দুঁদে তদন্তকারীদের৷ বাক্স খুলতেই দেখা মেলে মৃতদেহের৷ একেবারে পচাগলা অবস্থায় ভিতরে রাখা৷ শরীরটা দুমড়ে-মুচড়ে গিয়েছে৷ দুর্গন্ধ বেরচ্ছে৷ এবার তদন্তকারীরা নিশ্চিত হয়ে যান যে, এই ঘটনার পিছনে নিশ্চয় কোনও ষড়যন্ত্র রয়েছে৷ মৃতদেহ উদ্ধার ও সেটিকে ময়নাতদন্তে পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করার পাশাপাশি তদন্তকারীরা জেরা শুরু করেন ওই মহিলাকে৷ আর তার পরই একটু একটু করে পর্দা উঠতে শুরু করে রহস্যের উপর থেকে৷
আরও পড়ুন: নিম্ন মানের সামগ্রী দিয়ে রাস্তা তৈরির প্রতিবাদে স্থানীয়দের বিক্ষোভ
পুলিশ সূত্রে খবর, ওই মহিলা জেরায় জানিয়েছে, তিনি গত শুক্রবার রাঁচিতে মেয়ের বাড়ি চলে যান৷ সেখান থেকে ফিরে আসার পর থেকেই ঘরে অস্বাভাবিক গন্ধ পাচ্ছিলেন৷ তার অনুপস্থিততে বাড়িতে ছিল তার স্বামী রাজীব কুমার৷ তাকে বিষয়টি জানালেও, সে প্রথমে গুরুত্ব দেয়নি৷ বৃহস্পতিবার সকালে বাড়ির বাতিল ফ্রিজ থেকে ওই মহিলা স্যুটকেসটি বের করে৷ তার পর রাজীব তার কাছে সব স্বীকার করে৷
সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ জেরা শুরু করে রাজীবকে৷ পুলিশের দাবি, রাজীব তাদের জানায়, শুক্রবার তার স্ত্রী বেরিয়ে যাওয়ার পর বাড়িতে আসে শিল্পা আগরওয়াল৷ রাজীব বাঁকুড়ার মেজিয়ায় একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের ম্যানেজার৷ শিল্পা সেখানে ব্যাংক মিত্র হিসেবে কাজ করত৷ সেই সূত্রেই তাদের পরিচয়৷ তার পর ঘনিষ্ঠতা৷ সেই থেকেই শিল্পার সঙ্গে রাজীব পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে৷ ফলে স্ত্রীর অনুপস্থিতিতে প্রায়ই দেখা করত তারা৷ সেভাবেই শুক্রবার বছর আঠাশের শিল্পা তার দুর্গাপুরের ফ্ল্যাটে হাজির হয়৷
আরও পড়ুন: প্রেম দিবসে রক্ত দিয়ে প্রাণ বাঁচানোর আর্জি
রাজীবের দাবি, শিল্পা বিয়ের জন্য বারবার চাপ দিচ্ছিল৷ সে নিয়েই তাদের মধ্যে বচসা হয়৷ তার পর শিল্পা আত্মঘাতী হয়৷ রাজীব গোটা ঘটনায় ভয় পেয়ে যায়৷ তাই শিল্পার দেহ স্যুটকেসে ভরে বাতিল ফ্রিজের মধ্যে রেখে দেয়৷
এর পরই পুলিশ রাজীব ও মনীষাকে আটক করে৷ থানায় নিয়ে গিয়ে তাদের দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদও করে৷ শেষে তাদের গ্রেফতার করা হয়৷ আসানসোল-দুর্গাপুর কমিশনারেট পুলিশ এখনও এ নিয়ে কোনও প্রকাশ্য বিবৃতি দেয়নি৷ তবে পুলিশ সূত্রে খবর, মৃতার মাথায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে৷ তাঁর গলায় ফাঁসের দাগ পাওয়া গিয়েছে৷ সেই থেকে তদন্তকারীদের অনুমান, শিল্পাকে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়৷ তার পর মৃত্যু নিশ্চিত করতে মাথার পিছনে আঘাত করা হয়৷ পুলিশের ধারণা, মনীষাও গোটা ঘটনা জানত৷ ঘটনায় তারও মদত ছিল৷
আরও পড়ুন: স্ত্রীকে খুনের চেষ্টার অভিযোগ স্বামীর বিরুদ্ধে
এদিকে এই ঘটনায় মেজিয়া থানায় আগেই একটি অভিযোগ দায়ের হয়৷ মঙ্গলবার শিল্পা আগরওয়ালের পরিবারের তরফে সেখানে একটি নিখোঁজের অভিযোগ দায়ের করা হয়৷ শুক্রবার বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন শিল্পা৷ আসানসোলের কন্যাপুরে মাসির বাড়ি যাবেন বলে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন তিনি৷ কিন্তু সেখানে না যাওয়ায় ও বাড়ি না ফেরায় নিখোঁজের অভিযোগ দায়ের করা হয়৷