সন্দেহের তালিকায় থাকলেও, বারবার চাতুরি করেই পুলিশের জাল কেটে বেরিয়ে যাচ্ছিল দিল্লিতে বছর সাতের শিশু খুনে অভিযুক্ত অভদেশ সাক্য। শেষ পর্যন্ত পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে সে।

প্রতিবেশী শিশু আশিস সাইনিকে খুন করে নিজের ঘরে ট্রাঙ্কে লুকিয়ে রেখেছিল অভদেশ সাক্য। নিখোঁজ হওয়ার ৩৭ দিন পরে উত্তর দিল্লির নাথুপুরার বাড়ি থেকে প্রধান অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
দিল্লির উত্তর পশ্চিমের ডিসিপি আসলাম খান জানিয়েছেন, শিশুটির মা-বাবাকে চরম ঘৃণা থেকেই এই খুন। তাঁদের কাছ থেকে টাকা আদায়ের উদ্দেশ্যও ছিল এই অভিযুক্তের।
অভিযুক্ত অভদেশ সাক্যের সঙ্গে মৃতের পরিবারের মহিলাদের সম্পর্কও খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
উত্তর প্রদেশের এটোয়ার বাসিন্দা পদার্থ বিদ্যায় স্নাতকোত্তর অভদেশ সাক্য পুলিশকে জানিয়েছে, সে তিনবার সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় বসেছিল। দুবার প্রাথমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণও হয়। কিন্তু নাথুপুরায় মৃত আশিসের পরিবার জানিয়েছে, সাক্য সিবিআই-এর অফিসার ছিল। সে কোনও এক সময় জানিয়েছিল, সে গোয়েন্দা সংস্থায় কাজ করে। কোনও সময় সে বলেছে, আয়কর বিভাগে কাজ করে সে। জানুয়ারিতে সে জানিয়েছিল, সে সিবিআই অফিসার হয়ে গিয়েছে। তাকে বাংলো, গাড়ি এবং বন্দুকও দেওয়া হয়েছে। অভিযুক্তের ব্যবহার, শিক্ষা এবং ইংরেজিতে কথা বলার ধরন দেখে তাঁকে বিশ্বাস করেছিলেন বলে জানিয়েছেন আশিসের বাবা করণ সাইনি।
পুলিশ আশিসের খোঁজে তল্লাশি শুরুর সঙ্গে সঙ্গে অভদেশকে ঘিরে সুগন্ধির আবেশ তৈরি হত। ৭ জানুয়ারি বিকেল ৫.১৫ নাগাদ কাকার বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয় আশিস। অভদেশ সাক্য ঘরের কাছেই থাকা সিসিটিভি ক্যামেরায় ৫.১৭-তে দেখা গিয়েছিল আশিসকে।

মৃতের বাবা জানিয়েছেন, তাঁর শিশু পুত্রকে খুঁজে বের করতে যথেষ্টই উৎসাহী ছিল সাক্য। এমন কী নিখোঁজের দিনও পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়েরে সাহায্য করেছিল সে। শিশুর খোঁজে ক্রাইম ব্রাঞ্চ এবং স্পেশাল সেলে যাওয়ার কথাও জানিয়েছিল সে। অভদেশ এও জানিয়েছিল, সে সিবিআই অফিসারদের চেনে। তদন্তের ভার যাতে তাদের হাতে দেওয়া যায়, সেই বিষয়টিও সে দেখবে বলেছিল।
পরবর্তী চার সপ্তাহে অভদেশ সাইনির বাড়িতে ছিল, সেখানে খাওয়া দাওয়া করেছে। এমনকী শিশুর বাবাকে নিয়ে তদন্তকারীদের কাছেও গিয়েছে।
মদের বোতল, বিস্কুটের প্যাকেট, রুমাল নিয়ে সে তদন্তকারীদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছে সে। জানিয়েছেন তদন্তকারীরা।
তদন্তের জন্য পুলিশ বারবারই প্রতিবেশীদের কাছে গিয়েছে। জলের ট্যাঙ্ক-সহ একাধিক জায়গায় তল্লাশিও চালিয়েছে। কিন্তু সাক্য সবসময়ই তার ভাড়া বাড়ির সামনে বলে থেকেছে, যতক্ষণ না পর্যন্ত পুলিশ সেখান থেকে যায়। এমনটাই জানিয়েছেন শালিনী রাজৌর নামে এক প্রতিবেশী।
সপ্তাহ খানের আগে মৃতের বাবা গিয়েছিলেন অভিযুক্তের ঘরে। সেখানে নোংরা গন্ধ আসায় সাক্য মরা ইঁদুরকে দেখিয়ে দেয়। সঙ্গে সঙ্গে এক বোতল সুগন্ধিও ছড়িয়ে দেয় সেই জায়গায়।
পুলিশ জানিয়েছে অভিযুক্তের ঘর থেকে সুগন্ধির ১০ টি বোতল উদ্ধার করা হয়েছে।
মৃতের বাবাকে গাড়ির শো-রুমে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা থেকে ডিসিপির অনুমান, শিশুর পরিবারের থেকে টাকা আদায় করে সাক্য একটি এসইউভি কিনতে চেয়েছিল। সে ভেবেছিল অনায়াসেই আশিসের পরিবারের কাছ থেকে ১৫ থেকে ২০ লক্ষ টাকা আদায় করা যাবে।