স্টাফ রিপোর্টার, কলকাতা: মুকুল রায়কে এখনই গ্রেফতার করা যাবে না বলে বুধবার সাফ জানিয়ে দিল কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ৷ কংগ্রেস নেতার মৃত্যুর ঘটনায় সঠিক তথ্য এখনও জোগাড় করে উঠতে না পারায় হাইকোর্টে সময় চাইল রাজ্য৷ আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন নির্দেশ বহাল রাখলেন বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর ডিভিশন বেঞ্চ৷

বীজপুরের কংগ্রেস নেতা মৃণাল কান্তি সিংহ রায়ের রহস্য মৃত্যুর ঘটনায় চলতি বছর ৯ জানুয়ারি বারাকপুর আদালতে একটি মামলা করেন মৃণাল বাবুর বোন সোনলীদেবী৷ বিচারক বিজপুর থানাকে নির্দেশদেন অবিলম্বে এফআইআর রুজু করে তদন্তের রিপোর্ট জমা দিতে৷ মুকুল রায়ের বিরুদ্ধে ভারতীয় সংবিধানের ফৌজদারি কার্যবিধি ৩০২,৩০৪,৩২৫,এবং ১২০ বি’তে মামলা রুজু করেছে বিজপুর থানার পুলিশ৷ এই ঘটনায় মুকুল রায়কে গ্রেফতার করতে পারে পুলিশ৷ সেই আশঙ্কা থেকেই আগাম জামিনের আবেদন করেন মুকুল রায়৷

আজ মুকুল রায়ের আগাম জামিন মামলার শুনানিতে রাজ্যের অতিরিক্ত অ্যাডভোকেট জেনারেল অভ্রতোষ মুখোপাধ্যায় হাইকোর্টে সময় চেয়ে জানান ২০১১ সালের ঘটনা এবং তিন বছর বাদে এফআই আর৷ ফলে তদন্তে যথেষ্ট বেগ পেতে হচ্ছে পুলিশকে৷ বিজপুরের প্রাক্তন কংগ্রেস বিধায়ক মৃণাল কান্তি সিংহ রায়ের মৃত্যুর তথ্য এখনও যোগার করা সম্ভব হয়নি৷ এবং ডেথ সার্টিফিকেট হাতে আসেনি৷ বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর ডিভিশন বেঞ্চ রাজ্যের আবেদন মঞ্জুর করেন এবং আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত বিজেপি নেতা মুকুল রায়কে যেমন পুলিশ গ্রেফতার করতে পারবে না৷ পাশাপাশি মুকুল রায়কেও তদন্তে সহযোগিতা করতে হবে৷ মামলার পরবর্তী শুনানি ১৫ মার্চ৷

গত ৩০ জানুয়ারিতে প্রথম মামলার শুনানি হয়৷ সেই দিন মুকুল রায়ের আইনজীবী আশিস সান্যাল বলেছিলেন এটা রাজনৈতিক এবং উদ্দেশ্য প্রণোদিত একটি মামলা৷ মুকুল রায় তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগদান করেছেন বলেই তাকে চক্রান্ত করে ফাঁসানোর চেষ্টা হচ্ছে৷ কারণ মৃণাল বাবু মারা গিয়েছেন তিন বছর আগে৷ তাহলে এতদিন কেন অভিযোগ করেননি৷

অ্যাডিশনাল অ্যাডভোকেট জেনারেল অভ্রতোষ মজুমদার বলেছিলেন, পুলিশ অভিযোগ নিতে অস্বীকার করে৷ পরে বারাকপুর আদালতে অভিযোগ করার পর পুলিশ অভিযোগ নেয়৷ বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী এ এজি’র কাছে মৃণাল বাবুর ময়নাতদন্তের রিপোর্ট চান৷ মৃত্যুর সংশয়পত্র দেখতে চান৷ কিন্তু সেটা আদালতে দিতে পরেননি এএজি৷ তাই আগামী ১৪ ই ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মুকুল রায়কে পুলিশ এই ঘটনায় গ্রেফতার করতে পারবেন না৷ পাশাপাশি ওই দিন তদন্তের সমস্ত রিপোর্ট ও ডেথ সার্টিফিকেট দিতে হবে৷ এমনই নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট৷

বিজপুরের প্রাক্তন কংগ্রেস বিধায়ক মৃণাল কান্তি সিংহ রায়ের হাত ধরেই রাজনৈতিক হাতে খড়ি মুকুল রায়ের৷ ১৯৯৬ সালে বিজপুর থেকে বিধায়ক নির্বাচিত হন মৃণাল বাবু৷ কাঁচরাপাড়া একডাকে তাকে সবাই চেনেন৷  মামলার বয়ান অনুযায়ী ৮ জুন ২০১১ সালে রাত ১২ টা নাগাদ সময় কাঁচরাপাড়ার হালিশহর থেকে স্কুটারে করে বাড়ি ফিরছিলেন৷ সেই সময় ভূতবাগানের সামনেই উল্টোদিক থেকে আসা একটি গাড়ির সাথে ধাক্কা লাগে এবং মাটিতে পড়েগিয়ে মাথায় এবং শরীরে গুরুতর আঘাত পান৷ কল্যাণী মেডি ভিউ হাসপাতালে নিয়ে গেলে তার শরীর অবনতি হওয়া মৃণাল বাবুকে নিয়ে আসা হয় কলকাতা পিয়ারলেস হাসপাতালে৷

মৃণাল বাবুর বোন সোনালী কুণ্ডু (সিংহ রায় )এর অভিযোগ তাঁদের কোন কিছু না জানিয়েই এসব করেছেন মুকুল রায়৷ হাসপাতালে দাদাকে দেখতে গেলে সেখানে তাঁদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি৷ সোনালী দেবীর আর অভিযোগ, দাদা মৃণাল সিংহ রায়কে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়ার পর মুকুল রায় তাকে হালিশহরের বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে যাননি৷ কলকাতায় আচার্য জগদীশ চন্দ্র বোস রোডে “বৈশালী “নামে একটি গেস্ট হাউসে রেখে দাদার চিকিৎসা করেন মুকুল রায়৷ এই গেস্ট হাউসে মুকুল ঘনিষ্ঠ রমেশ প্রসাদ এবং মি মনি নামে দুজন তার দাদার দেখাশোনা করতেন৷ সেই খবর পেয়ে দাদার সঙ্গে দেখা করতে এলেও দেখা করতে দেওয়া হয়নি৷

এরপর ২৬ জুন বিজপুর থানায় মুকুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাতে গেলে অভিযোগ নিতে অস্বীকার করে পুলিশ৷ ১৯ জানুয়ারি ২০১৬ সালে মৃণাল কান্তি সিংহ রায় কলকাতা ওই বেসরকারি হাসপাতালে মারা যান৷ এর পর সোনালী দেবী তৃণমূল কংগ্রেসে যোগদান করেন৷ ইতিমধ্যেই মুকুল রায় তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগদান করেছেন৷

- Advertisement -